আজ ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভৈরবে নারী হোটেলকর্মী খুনের নেপথ্যে ‘পরকীয়া’ প্রেমিকের স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গত ১৭ জুন টিনপট্টি এলাকায় জুয়েল মিয়ার বাসার ভাড়াটিয়া হোটেল কর্মী রিনা বেগম (৩৭) হত্যাকান্ডের নেপথ্যে পরকীয়া, পুলিশের হাতে আটক মূল আসামি প্রেমিক আজমান হোসাইন শাকিল (২৩) এর আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী।

কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশ এর মিডিয়া সেল সুত্রে জানা যায়, গত ইং ১৭.০৬.২০২৩ তারিখ বেলা অনুমান ২ ঘটিকার সময় ভৈরব থানাধীন ভৈরব বাজার টিনপট্টি এলাকায় জুয়েল মিয়ার বাসার ভাড়াটিয়া হোটেল কর্মী রিনা বেগম (৩৭)’র মৃতদেহ তাহার ভাড়া বাসার ৩য়তলার  ফ্লাট হইতে উদ্ধার করিয়া লাশ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে ভৈরব থানা পুলিশ।
নিহত রিমা শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার পশ্চিম টালকী গ্রামের মৃত আঃ জব্বারের মেয়ে।
প্রাথমিকভাবে ঘটনাটি হত্যাকান্ড প্রতীয়মান হওয়ায় ভিকটিমের মা রুপবানু খাতুন বাদী হয়ে ভৈরব থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নি:), ইনর্চাজ-মোঃ মিজানুর রহমান মামলার তদন্তভার গ্রহন করিয়া তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় প্রাথমিকভাবে ঘটনায় জড়িত আসামিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ১৮ জুন ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা চালিয়ে ১৯ তারিখ মূল আসামি আজমান হোসাইন শাকিল (২৩)কে আটক করে।
আসামি আজমান হোসাইন শাকিল লাখাই উপজেলার কালাউক গ্রামের জালাল মিয়ার ছেলে।

পুলিশের প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামী ঘটনার সহিত জড়িত মর্মে স্বীকার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার পরে মৃতা রিনা বেগমের খুয়া যাওয়া ২টি মোবাইল ও রুমে থাকা ১টি এলইডি টিভি মনিটর তাহার হেফাজতে রহিয়াছে মর্মে স্বীকার করে। পরবর্তীতে আসামীকে সহ অভিযান পরিচালনা করিয়া কিশোরগঞ্জের  কটিয়াদী পৌরসভা এলাকায় আসামীর আত্মীয়ের বাসা হইতে উদ্ধারপূর্বক করে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদানের জন্য ২০ জুন মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট কিশোর দত্তের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের জন্য প্রেরণ করে।
ঘটনার বিবরণে জানাযায়, প্রায় ৬ মাস পূর্বে ভৈরব বাজারে একটি হোটেলে বাবুর্চীর কাজ নেয় শাকিল, এ হোটেলেই আগে হইতে ধোয়ামুছার কাজ করতো ভিকটিম রিনা বেগম। একই হোটেলে কাজ করার সুবাদে আসামীর সাথে ভিকটিম রিনা বেগমের পরিচয় ও একপর্যায়ে তাহাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। যা শেষে শারীরিক সর্ম্পকে গড়ায়।

ঘটনার দিন ভিকটিম রিনা বেগম ও তাহার দুই ছেলে মোজাম্মেল (১৭), রিয়াজ (২০) এবং রিনা বেগমের কথিত স্বামী-দুলাল (৫৭) সকাল ৯টার মধ্যে যার যার কাজে চলিয়া যায়। সকাল অনুমান ৯:৩০ টার সময় আসামী শাকিল ভিকটিম রিনা বেগমের বাসায় এসে রিনা বেগমকে ফোন দিয়া বাসায় আসতে বলে। ভিকটিম রিনা বেগম আসামীর ফোন পাইয়া বাসায় গেলে আসামী শাকিল রিনা বেগমকে তাহার কথিত স্বামী দুলালের জন্যে আসামী শাকিলের বিভিন্ন অসুবিধা হচ্ছে এই বিষয় নিয়া জিজ্ঞাসা করিলে আসামীর সাথে তাহার কথা কাটাকাটি হয়। ভিকটিম রিনা বেগম আসামীর উপর রাগান্তিত হইয়া ঘরে থাকা ১টি ইট নিয়া নিজেই নিজের মাথায় আঘাত করার চেষ্টা করিলে শাকিল রিমাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভিকটিম রিনা বেগম শান্ত নাহওয়ায় একপর্যায়ে আসামী শাকিল পিছন দিক হইতে হাত দিয়া রিনা বেগমের গলায় চাপিয়া ধরিলে রিনা বেগম ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে। পরে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য আসামী শাকিল প্রথমে ভিকটিমের গলায় তাহার ওড়না দিয়া প্যাচায় ও গিট দেয় এবং আসামী শাকিল ঘটনাস্থল হইতে চলিয়া আসার সময় ভিকটিমের ব্যবহৃত ২টি মোবাইল সেট ও ১টি এলইডি টিভি মনিটর নিয়া চলিয়া যায়। যাহাতে পরবর্তীতে এলাকার লোকজন মনে করে ঘটনাটি চুরির ঘটনা এবং চুরি সংঘঠিত হওয়ার সময় চোর কর্তৃক রিনা বেগম খুন হইয়াছে।
জবানবন্দি শেষে বিজ্ঞ আদালত আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category